রাসেল ভাইপারঃ আতঙ্ক না সচেতন হোন

অন্যান্য স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা

রাসেল ভাইপারঃ আতঙ্ক না সচেতন হোন

বর্তমানে একটি আতেঙ্কের নাম। এটি একটি বিষাক্ত সাপের নাম। এটি অ্যানিম্যালিয়া রাজ্যের কর্ডাটা পর্বের একটি প্রানী। এর বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii । রাসেল ভাইপার কে বাংলাতে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বলা হয়। স্কটিশ প্রকৃতিবিদ প্যাট্রিক রাসেলের নামে রাসেল ভাইপার নাম করন করা হয়। প্যাট্রিক রাসেল ১৭৯৬ সালে তার অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ ইন্ডিয়ান সারপেন্টস, কালেক্টেড অন দা কোস্ট অফ করোমান্ডেল বইয়ে এই সাপ সম্পর্কে লিখেছিলেন।

এর বৈশিষ্ট্যঃ

 রাসেল ভাইপার এর দেহ মোটা লেজ সরু ও ছোট হয়ে থাকে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক সাপের দৈর্ঘ্য সাধারনত ১.২ মিটার (৪ ফুট) প্রর্যন্ত হতে পারে। এদের গায়ের রঙ বাদামি বা ধূসর হয়, যার উপর হলুদ বা কমলা রঙের বড় বড় ছোপ থাকে। এই ছোপগুলি রাসেল ভাইপারকে সহজে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এর মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার এবং ঘাড় থেকে আলাদা। থুতনি ভোঁতা, গোলাকার এবং উত্থিত। নাসারন্ধ্র বড়ো, যার প্রতিটি একটি বড়ো ও একক অনুনাসিক স্কেলের মাঝখানে অবস্থিত।

আবাস্থলঃ

এই সাপগুলি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে দেখা যায়। এরা সাধরনত শুষ্ক অঞ্চল, ঘাসের মাঠ, খোলা বন এবং কৃষিজমিতে বসবাস করে। এরা রাতে সক্রিয় হয় এবং ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং অন্যান্য সরীসৃপের উপর শিকার করে। আগে শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপ দেখা যেত। যে কারণে এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ বলেই পরিচিত ছিল। বর্তমানে পদ্মা অববাহিকা ধরে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে রাজশাহী, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, হাতিয়া, ভোলাতে রাসেল ভাইপার এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বিষ এবং এর প্রভাবঃ

একটি রাসেল ভাইপার সাপ এক ছোবলে অনেকটা বিষ ঢালতে পারে। পূর্ণবয়স্ক সাপের ক্ষেত্রে বিষের পরিমাণ ১৩০-২৫০ মিলিগ্রাম, ১৫০-২৫০ মিলিগ্রাম এবং ২১-২৬৮ মিলিগ্রাম । ৭৯ সেমি (৩১ ইঞ্চি) গড় দৈর্ঘ্যের শিশু ভাইপারের বিষের পরিমাণ ৮ থেকে ৭৯ মিলিগ্রাম (গড় ৪৫ মিলিগ্রাম) অবধি দেখা যায়।

রাসেল ভাইপারের দংশন থেকে প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে তীব্র ব্যথা, ফোলা, রক্তপাত, এবং বমি। বিষক্রিয়া শরীরে প্রবেশ করলে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে, কিডনি ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক এবং কখনও কখনও মৃত্যুও ঘটতে পারে।

রাসেল ভাইপারঃ আতঙ্ক না সচেতন হোন

চিকিৎসাঃ

ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে বিষধর সাপের বিষ প্রতিরোধের জন্য যে polyvalent antivenom (ভারতের Haffkine Institute এ তৈরি) প্রয়োগ করা হয়, তার দ্বারা চন্দ্রবোড়ার বিষেরও প্রতিরোধ সম্ভব। ২০১৬ সালে কোস্টারিকার Clodomiro Picado Institute একটি নতুন অ্যান্টিভেনম তৈরি করেছে এবং শ্রীলঙ্কায় তা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

এটিই রাসেল ভাইপারের দংশনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা যা রাসেল ভাইপারের বিষের বিরুদ্ধে শরীরকে প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে। তবে, এই অ্যান্টিভেনম শুধুমাত্র তখনই কার্যকর যখন তা সময়মতো প্রয়োগ করা হয়।

২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে বাংলাদেশে মহাবিপন্ন এবং ও বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী সাপটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে, ২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত ৩২টি জেলায় এই সাপ দেখা গেছে।

সুতরাং যদিও এটি প্রকৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবুও মানুষের জন্য এটি একটি বড় হুমকি। সময়মতো চিকিৎসা, সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রাসেল ভাইপারের দংশনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি, এদের সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত যাতে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকে এবং আমাদের পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে।

রাসেল ভাইপারঃ আতঙ্ক না সচেতন হোন

ইংরেজী ভার্সন

Leave a Reply