গরমকালে শিশুর যত্ন: কী করবেন, কী করবেন না
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল মানেই প্রচণ্ড গরম, তীব্র রোদ আর ঘামঝরা দিন। এই সময়ে শিশুরা খুবই সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট র্যাশ, পানিশূন্যতা, ডায়রিয়া কিংবা হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই শিশুর যত্নে একটু বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।
✅ যা করবেন
- শিশুকে হালকা ও ঢিলেঢালা জামা পরান
সুতির ঢিলেঢালা জামা শিশুদের ঘাম শুষে নেয় ও গরম কম অনুভব করে। - প্রচুর পানি পান করান
শিশু যদি ৬ মাসের বেশি বয়সের হয়, তাকে বারবার পানি, ডাবের পানি বা ফলের রস দিন। - ঠান্ডা ঘরে রাখার চেষ্টা করুন
রোদে বাইরে না নিয়ে গিয়ে ঘরে থাকাই ভালো। দরকার হলে পাখা বা এয়ার কুলার ব্যবহার করুন। - নিয়মিত গোসল করান
দিনে একাধিকবার ঠাণ্ডা পানিতে গোসল শিশুর শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। - ঘামে ভেজা জামা বারবার বদলান
ঘামে ভেজা জামা শরীরে রাখলে ঠান্ডা বা র্যাশ হতে পারে।
❌ যা করবেন না
- রোদে বাইরে নিয়ে যাবেন না
সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। - চকোলেট, আইসক্রিম বেশি খাবেন না দিন
এইসব খাবার তাৎক্ষণিক স্বস্তি দিলেও শিশুর পেট খারাপ বা গলা ব্যথা হতে পারে। - বদ্ধ ঘরে শিশুকে রাখবেন না
বাতাস চলাচলহীন ঘরে শিশুর শরীর গরম হয়ে যেতে পারে। - শিশুকে ঘামতে দেখেও উপেক্ষা করবেন না
অতিরিক্ত ঘাম মানে শরীরের পানির ঘাটতি হচ্ছে — দ্রুত ব্যবস্থা নিন। - খাবার খোলা রেখে দিবেন না
গরমকালে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়। শিশুকে দেওয়ার আগে প্রতিবার খাবার পরীক্ষা করুন।
গরমকালে শিশুর যত্ন: কী করবেন কী করবেন না
🛡️ অতিরিক্ত পরামর্শ
- শিশুর শরীরে র্যাশ হলে বেবি পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
- অতিরিক্ত ঘাম বা পানিশূন্যতার লক্ষণ (মুখ শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কম হওয়া) দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
🍲 শিশুর খাবার নির্বাচনে সতর্কতা
গরমকালে শিশুর খাবারের প্রতি বাড়তি মনোযোগ জরুরি। সহজপাচ্য ও হালকা খাবার দিন।
- ভাত, ডাল, সবজি ও সেদ্ধ ডিম দিন — এসব খাবার হজমে সহজ ও পুষ্টিকর।
- দুধ খাওয়ালে যেন সেটা ভালোভাবে ফোটানো হয় ও ঠাণ্ডা পরিবেশে রাখা হয়।
- রাস্তার খাবার বা দীর্ঘক্ষণ খোলা খাবার থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
🦟 মশা ও জীবাণু থেকে শিশুর সুরক্ষা
বর্ষাকাল কাছাকাছি চলে এসেছে, এই সময়ে গরমে ঘাম এবং পানি জমে যাওয়ার কারণে মশা বেড়ে যায়।
- শিশুকে দিনে এবং রাতে মশারি ব্যবহার করতে দিন।
- বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ বেবি ফ্রেন্ডলি মশা নিরোধক লোশন ব্যবহার করতে পারেন।
- শিশুর চারপাশ পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন — যেন কোনো জায়গায় পানি জমে না থাকে।
📅 শিশুর রুটিন ঠিক রাখুন
গরমকালে শিশুদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাই:
- ঘুমের সময় যেন ঠিক থাকে, দিনে ছোট্ট একটি ঘুম শিশুদের রিফ্রেশ রাখে।
- খেলার সময় বিকেলের দিকে রাখুন, যখন রোদ কম থাকে।
- গরমে জেদ বা মেজাজ খারাপ হলে শিশুকে শান্তভাবে সময় দিন।
🧊 বাড়িতে তৈরি ঠাণ্ডা পানীয়
বাজারের কোমল পানীয় থেকে দূরে রাখুন। বরং বাড়িতেই কিছু স্বাস্থ্যকর পানীয় তৈরি করুন:
- লেবু পানি (কম চিনি দিয়ে)
- তরমুজ
- ডাবের পানি
এইসব পানীয় শিশুকে ঠাণ্ডা রাখে ও শরীরে পানি ঘাটতি পূরণ করে।
গরমকালে শিশুর যত্ন: কী করবেন কী করবেন না