কুরবানীর ফজিলত
কুরবানী কী ?
কুরবানী হলো ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরবানী শব্দটি ফারসী বা উর্দু যা আরবী শব্দ কুরবান থেকে এসেছে। আরবী কুরবান শব্দের বাংলা নৈকট্য বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার মাধ্যম। ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে কুরবানী বলা হয়।
উৎপত্তিঃ
কুরবানী আদম আ.-এর যুগ থেকে প্রচলিত আছে। পবিত্র কুরআনে আদম আ. দুই সন্তানের কুরবানীর কথা পাওয়া যায়। তবে প্রত্যেক নবীর আমলে কুরবানির পদ্ধাতি এক রকম ছিলনা। কুরআন ও হাদিস আনযায়ী বর্তমানে যে পদ্ধতী প্রচলিত আছে তা ইব্রহিম আ. এর আমল থেকে আছে। তাই করবানীকে ইব্রাহিম আ. এর হাদিস বলা হয়।
ইব্রাহিম আ. এর কুরবানীঃ
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তা’আলা ইসলামের রাসুল হযরত ইব্রাহিম আ. কে স্বপ্নযোগে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কুরবানি করার নির্দেশ দেনঃ “তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি কর”। তিনি এই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছে তো এ মুহূর্তে প্রিয় পুত্র ইসমাইল আ. ছাড়া আর কোনো প্রিয় বস্তু নেই। তখন তিনি পুত্রকে কোরবানির উদ্দেশ্যে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যখন ইব্রাহীম আরাফাত পর্বতের উপর তাঁর পুত্রকে কোরবানি দেয়ার জন্য গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তাঁর পুত্রের কোন ক্ষতি হয়নি। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি ঈদ উল আযাহা নামে উদ্যাপন করেন।
কুরবানীর নিয়মঃ
কুরবানী করার সময় কয়েকটি নিয়ম অনুসরন করতে হয়।
- কুরবানীর জন্য উপযুক্ত পশু নির্বাচন করতে হবে। উট, গরু, ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা হতে পারে। এসব পশু নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে এবং কোন শারীরিক ত্রুটি থাকা যাবে না।
- কুরবানী করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিয়ত করতে হবে। ব্যাক্তিগত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কুরবানী করা যাবে না।
- ইসলামি বিধান অনুযায়ী পশু জবাই করতে হবে । এক্ষেত্রে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে যাতে পশুর কষ্ট কম হয়।
- ইসিলামিক নিয়ম অনুযায়ী করবানীর গোস্ত ভাগ করে দিতে হবে।
- ঈদ-উল-আযহার নামাজের পর থেকে শুরু করে তৃতীয় দিন সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কুরবানী করা যাবে।
কুরবানীর ফজিলতঃ
কুরবানীর ফজিলত সর্ম্পকে হাদিসে এসেছে , সাহাবীগণ রাসুল সা. কে প্রশ্ন করেছেনে এর (কুরবানী) ফজিলত কি ? নবী করীম সা. উত্তরে বললেন, প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে।’ তাঁরা আবারো জিজ্ঞাসা করলেন, ’পশম বিশিষ্ট পশুর বেলায় কী হবে? (পশুর তো পশম অনেক বেশি)। নবী করীম সা. বললেন, ‘পশমওয়ালা পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকি রয়েছে।’ সুবহানাল্লাহ!
অন্য হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, যারা কুরবানী করে তারা আখিরাতে বিশেষ পুরস্কার পাবে। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেছেন, “আদম সন্তানের কুরবানীর দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাজ হল কুরবানীর পশু জবাই করা। কিয়ামতের দিন কুরবানীর পশু তার শিং, পশম এবং খুরসহ উপস্থিত হবে। নিঃসন্দেহে কুরবানীর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। অতএব, প্রাণ খুলে কুরবানী করো।”
কুরবানী নামাজের মতো স্বাতন্ত্র ইবাদত। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে কুরবানী গুরুত্ব, ফজিলত ও সাওয়াব অনেক বেশি। আর এটা হযরত ইব্রাহিম আ. সুন্নাত হওয়ার কারণেই নবী করীম সা. নিজে তা পালন করেছেন। সে কারণে তা উম্মতে মুহাম্মাদির সামর্থ্যবানদের জন্যও আদায় করা আবশ্যক।